রামুতে রমরমা মাদক ব্যবসা: হাত বাড়ালেই মিলে ইয়াবা

রামু প্রতিনিধি ::

ফাইল ছবি

হাত বাড়ালে অতি সহজে ইয়াবা ট্যাবলেট মিলছে রামু উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায়। মাদকের অনেকটা স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে পুরো উপজেলা। প্রতিনিয়ত ঘটছে ইয়াবা লুটের ঘটনাও।

উপজেলার ১১ ইউনিয়নের এমন কোন গ্রাম নেই যেখানে ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছেনা। সাম্প্রতিক সময়ে  এর ভয়াবহতা ভয়ঙ্কর আকার ধারন করেছে। চাইলেই হাতের কাছে পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা।

ইয়াবার সহজলভ্যতার কারনে এই নেশায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের পাশাপাশি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা আসক্ত হয়ে পড়েছে। কক্সবাজার জেলা জুড়ে পুলিশের বড় ধরনের রদবদলের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আবারো  উল্লেখ্যযোগ্য হারে  ইয়াবা ব্যবসা বেড়ে গেছে রামু উপজেলায়।

বিশেষ করে রামু উপজেলার প্রধান বানিজ্যিক এলাকা চৌমুহনী স্টেশন ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে আশঙ্কাজনক হারে ইয়াবা ব্যবসা বেড়ে গেছে।
স্টেশনকেন্দ্রিক ও  রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন একটি বিশেষ এলাকার  সক্রিয় একটি গ্রুপ নির্ভয়ে চালিয়ে যাচ্ছে ইয়াবার ব্যবসা। পাশাপাশি ঐ বিশেষ গ্রুপটি  ইয়াবা লুটের ঘটনাও ঘটাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

বর্তমান সময়ে মাদক বিরোধী অভিযান খুব একটা জোরদার না থাকায় মাদক ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে বলে জানান রামুর সচেতন মহল।

বিগত সময়ে দেশে মাদকবিরোধী অভিযানে রামু উপজেলায় ইয়াবা, মাদকদ্রব্য ব্যবসার সাথে জড়িত ও সেবনকারী গ্রেপ্তার হলেও গড়ফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের আশ্রয়ে এই ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, টেকনাফ-উখিয়া হয়ে ইয়াবা রামু উপজেলায় পাচার হয়। এছাড়া রামুর সাথে মিয়ানমারের সিমান্ত থাকায় কচ্ছপিয়ার মৌলভীকাটা এবং নাইক্ষ্যংছড়ি ও সোনাইছড়ির বিভিন্ন পয়েন্ট হয়ে অতি সহজে ইয়াবা রামুতে প্রবেশ করছে। রামু উপজেলার চৌমুহনী স্টেশন, রামু ফকিরা বাজার, স্বপ্নপুরী রাস্তার মাথা, শ্রীকুল, তেচ্ছিপুল, রামু বাইপাস, হাসপাতাল গেইট,চা বাগান, মেরংলোয়া, চাকমারকুলের কলঘর, শ্রীমুরা, রাজারকুলের পাঞ্জাগানা এসব এলাকায় হাত বাড়ালেই মিলে ইয়াবা ট্যাবলেট। এসব স্পটে মাদকের আনাগোনা থাকলেও রহস্যজনক কারণে নীরবতা পালন করছে পুলিশ। আইনশৃংখলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিমত।

রামুর প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে নীতি নৈতিকতা বিরোধী কর্মকাণ্ড এবং অসামাজিক কার্যকলাপ দিনকে দিন বাড়ছে। ভয়াল ইয়াবার আগ্রাসী থাবায় সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময়ী রামু প্রায় বিপন্ন জনপদে পরিণত হয়ে পড়েছে। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে সর্বনাশা ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। মাদকের সহজলভ্যতার কারণে এখানে মাদক বিক্রেতার পাশাপাশি মাদকসেবীর সংখ্যাও বাড়ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রামুতে সমাজের কিছু উচুঁ ও মধ্য স্তরের  মানুষও অর্থের লোভে এই বে-আইনি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তারা তাদের প্রকাশিত ব্যবসার আড়ালে র্নিবিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে ইয়াবা ব্যবসা। এছাড়া কিছু কিছু মাদক ব্যবসায়ী মানুষের চোখকে ধুলো দিতে তাদের ইয়াবা ব্যবসা আড়াল করতে ভিন্ন ব্যবসায়ও জড়িত হয়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, সহজলভ্যতার কারণে মাদকদ্রব্যের দিকে ঝুঁকে পড়ছে রামুর যুবসমাজ। পাশাপাশি কিশোর-কিশোরী এমনকি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অধিক হারে ইয়াবা আসক্তি বাড়ছে। এতে প্রতিনিয়তই বেড়ে চলছে বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ।

রামু উপজেলা আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীল নেতা বলেন, রামুতে  আশংকাজনক ভাবে মাদক বিক্রি ও সেবন বেড়ে গেছে।  তাঁরা পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। জেলায় মাদকবিরোধী অভিযান হঠাৎ করে থেমে যাওয়ায় এক পরিস্থিতির অবতরন হয়েছে বলে তিনি জানান।
স্থানীয় থানা পুলিশ মাঝে মধ্যে মাদকসহ সেবনকারীদের আটক করলেও মূল পাচারকারীরা থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। যে কারণে কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না মাদক বেচাকেনা। বিশেষ করে সর্বনাশা ইয়াবার ব্যাপক বিস্তৃতির কারণে এখানকার সচেতন অভিভাবক মহল তাদের সন্তানদের নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছেন।

ইয়াবার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া বলেন, নিয়মিত ইয়াবা সেবনে রক্তচাপ বৃদ্ধি, হার্ট অ্যাটাক, লিভারে সমস্যা, ঘুমের ব্যাঘাত, অস্বস্তিকর মানসিক অবস্থা, চিরস্থায়ী যৌন অক্ষমতা, ব্রেন স্ট্রোক, মস্তিস্কের সমস্যা, দৃষ্টিশক্তি কেমে যাওয়া, মাথা ব্যাথা, ক্ষুদা নষ্ট হওয়া, ফুসফুসের প্রদাহসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি রয়েছে।

রামু প্রশাসনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, শুধুমাত্র পুলিশের পক্ষে মাদক বেচাকেনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বে-আইনি মাদকদ্রব্য উদ্ধারে জন সচেতনতা না বাড়ালে মাদকের ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে মাদক বেচাকেনা বন্ধে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে’।

রামু  থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে কোন ছাড় নেই। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত সেই যে দলেরই হোক না কেন তারা কোন ধরনের ছাড় পাবেনা।